গেল মাসের ২৯ তারিখে লন্ডনের হাইড পার্ক যেন হয়ে ওঠেছিল একখন্ড সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা পল্টন ময়দান।যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে শতশত বাংলাদেশিরা জড়ো হয়েছিল সেখানে।বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি যুক্তরাজ্য শাখার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে এই বিশাল পদযাত্রা অনুষ্টিত হয়।
ধারনা করা হচ্ছে অন্তত ছয় থেকে সাত হাজারের বেশি নেতা কর্মীরা অংশ নিয়েছিল এই কর্মসুচীতে।এই কর্মসুচী উপলক্ষ্যে প্রায় মাসাধিককাল সময় থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপিতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল।বিভিন্ন শহরে প্রচারনা সভাগুলো ছিল চোখে পড়ার মত। বিএনপির বর্তমান নেতা জনাব তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া।
পিতা দলের প্রতিষ্টাতা ছিলেন এবং মাতা বর্তমান চেয়ারপার্সন।আদালত কতৃক দায়িত্ব পালনে তিনি অপারগ বিধায় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক দায়িত্ব পালন করছেন প্রবাস থেকে।প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং এখান থেকেই দলের নিয়মিত কার্য্যক্রম বিভিন্ন মাধ্যমে সাধ্যমত তিনি পালন করে যাচ্ছেন।আবার দেশান্তর হওয়ার পর থেকে এই বিলেতেই কেবল তিনি প্রকাশ্য সমাবেশে অংশ নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। যাইহোক, গেল ২৯ তারিখে আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসুচীর প্রচারনার অংশ হিসেবে জনাব তারেক রহমান তার ঘরের লাগোয়া মসজিদে জুম্মার নামাজ শেষে লিফলেট বিলি করেছিলেন।
দেশের বাইরে দলীয় এই বিশাল কর্মসুচীর হাকডাক ও স্বয়ং তারেকের প্রচারনায় অংশ গ্রহন দেখে সবাই ধারনা করছিল তিনি নিজে উপস্থিত থেকে এখানে নেতৃত্ব দেবেন এবং আগামীর কোন গুরুত্বপু্র্ন বার্তা দিতে পারেন।মানুষ ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে অংশ নিয়েছিল।সবার উৎসুক দৃষ্টি খুজে বেড়াচ্ছিল মিঃ রহমানের উপস্থিতি।কিন্তু দুঃখজনকভাবে সবাইকে নিরাশ করে তিনি উপস্থিত হননি।তার এই উপস্থিত না থাকা নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির মাঝে।যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতারা বলছেন নিরাপত্তা জনিত কারনে উপস্থিত থাকাটাকে সমিচিন মনে করেননি তারেক।
মহান স্বাধীনতার সময় ১৯৭১ সালে হাইড পার্কে বাংলাদেশীদের যে ঐতিহাসিক সম্মিলন ঘটেছিল তারপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় প্রবাসি সম্মিলন ছিল বিএনপি আয়োজিত ২৯ আগস্টে।বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাবস্থা নিয়ে যখন আমেরিকাসহ অনেকে সরব তখন স্বভাবত এত বিপুল মানুষের এই সমাগম সাড়া ফেলবে এবং গনমাধ্যমে উঠে আসবে তার আশা করাটা ছিল স্বাভাবিক।কিন্তু লক্ষ্যনীয় যে, একমাত্র বাংলাদেশ থেকে চালিত দুই একটা অনলাইন পোর্টাল ছাড়া মুলধারার কোন গনমাধ্যমে তা আলোচনায় আসা দুরে থাক কোন সংবাদই আসেনি।
এমনকি ঢাকার বিএনপি নেতারা এত বিশাল সমাবেশ নিয়ে টকশো বা কোথাও টু শব্দটি পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে খোদ লন্ডনের বুকে এত মানুষের সমাবেশ হল এবং যেখানে স্বয়ং তাদের দলীয় প্রধানের বাস সেখানকার মুলধারার কোন গনমাধ্যমেও বিষয়টি নজরে আসেনি।বিএনপি নেতারা গনমাধ্যম নিয়ে উদাস কিনা জানিনা।অথচ চাইলে বিবিসিসহ নামকরা অনেক মিডিয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করা যেত। কর্মসুচির শেষে যুক্তরাজ্য বিএনপির দুই নেতা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রির বাসভবন নাম্বার দশ ডাউনিং স্টেটে গিয়ে স্মারক লিপি দিয়েছেন।
সেখানে কোন সিনিয়র অফিসার বা দায়িত্ববান কারে হাতে তারা তা দিয়েছেন বলে জানিনা।সিকিউরিটির কাজে নিয়োজিত ব্যাক্তির হাতে তারা তাদের পত্রটি দিয়ে চলে এসেছেন।এ যেন পর্বতের মুষিক প্রসবের সমান।মনের মাঝে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, এত এত মানুষের উপস্থিতি ও অংশ গ্রহনের অর্জন কি?