মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন

ভিপি নুরদের রাজনীতি প্রসঙ্গে -মাহবুবুল কারীম সুয়েদ

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩
  • ৯৬ Time View

১- হাসান আল মামুন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুল সংগঠক ও নেতা।তখন তার বগলের পাশে হালকা পাতলা এক ছেলে দাড়িয়ে থাকত দেখতাম।আন্দোলনের এক পর্যায়ে মামুন জেলে যায়।জুলুমের স্বীকার হয়।আস্তে আস্তে সরকারের উপর বিরক্ত মানুষের পাশাপাশি ছাত্রলীগ বিরোধী মনোভাবাপন্ন প্রায় সবপক্ষের পরোক্ষ ছায়া নিয়ে কোটা বিরোধী এই আন্দোলন জনপ্রিয়াতা পেয়ে যায় ছাত্রদের কাছে।এরমধ্যে কোন এক অজানা কারনে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষনা আসে।এই ঘোষনা নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।কারন যে আওয়ামীলীগ ৯৬-২০০১ অথবা ২০০৮ সাল থেকে ক্ষমতায় এসে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি তারা কেন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের দল সাধারন ছাত্রদের কাছে কোনটাসা কোটা আন্দোলনে তখন হঠাৎ করে নির্বাচন দিল।লক্ষ্য করলে দেখবেন নুরুকে “ভিপি নুর” বানানোর পরে আর কোন নির্বাচন দেয়নি কতৃপক্ষ।কাজে রাজনীতিতে এত পাকা দল অপরিকল্পিত এই কাজটি করেছে আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।যাইহোক, ছাত্রসংসদ নির্বাচন এল।মামুনের উদারতায় তার কমিটির সদস্য নুরুল হক নুরু ভিপি প্রার্থী হয়।সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ থেকেও সবচেয়ে ছাত্রবিচ্ছিন্ন ও দলীয় ইতিহাসে একমাত্র অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনকে প্রার্থী করা হয় তার বিপরীতে।যেখানে রাব্বানী-সঞ্জিত-সাদ্দামদের মত গ্রহনযোগ্য ছাত্রনেতারা ছিল।নুরুর প্যানেলের প্রায় সবাই ফেইল করলেও দেখা গেল নুরু পাশ করে ভিপি হয়ে যায়।মুলনেতা মামুনের রাজনৈতিক হারিয়ে যাওয়াটা চেয়ে চেয়ে দেখল সবাই।স্বাভাবিক নিয়মে লাইম লাইটে চলে আসা নুরুর পেছনে সবাই আসতে শুরু করল।নুরুও আস্তে আস্তে জাতীয় রাজনীতি নিয়ে স্পর্শকাতর কথাবার্তা শুরু করে দিল সময়ের ব্যাবধানে।নুরু দেখল অন্যদলে যোগ দেয়ার চেয়ে সে নিজেই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠতে পারবে।তার অংশ হিসেবে নুরু সহযোগী রাশেদদের নিয়ে একে একে প্রথমে যুব-শ্রমিক-প্রবাসি পরিষদের জন্ম দেয়।ভিন্ন কিছুর সন্ধানে থাকা মানুষজন জড়ো হতে থাকে নুরুদের দলের ছায়ায়।

২-বলতে দিদ্বা নেই, আমি নিজেও তাদের কার্যক্রমের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি একটা সময়।প্রবাসি অধিকার পরিষদের বেশ কিছু কর্মসুচিতে অংশ নিয়েছি।ভালো লেগেছে।যারা সংগঠক তাদের শতভাগ আমার কাছে দেশ প্রেমিক ও নতুনত্বের সন্ধানে ব্যাকুল বলে মনে হয়েছে।মানুষগুলো নিস্বার্থভাবে সংগঠনকে সময়দান, আর্থিক সহায়তা দান করে যাচ্ছে।বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা ভালো মানুষগুলো এইক্ষেত্রে সর্বাগ্রে আছে বলে জানি।বিলেতের জনৈক আইনজীবি দল-দেশ ও রাজনীতির প্রেমে পরিবার রেখে দেশে গিয়ে গন অধিকার পরিষদকে নিঃস্বার্থ সময় দিয়ে যাচ্ছেন।অযুত সম্ভাবনার এই তরুনেরা বছর দেড়েক আগে রাজনৈতিক দল “গন অধিকার পরিষদের” ঘোষনা দিয়েছে।রাজনীতি সচেতন আমি যারপরানই খুশি হয়েছি।সেদিন বিশাল একটি লেখা লিখে সাদুবাদ জানিয়েছি।সাথে যাতে ক্ষমতার জন্য কারো দালালি বা পা নাটে সে কথাও বলেছিলাম।বলেছি “নুরুল হক নুরুই পারে এই যুগের বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতে।”।

৩-দল ঘোষনাকালীন সময়ে আহবায়ক করা হয় স্বেচ্চায় গনফোরাম সাধারন সম্পাদক থেকে সরে আসা আইএমএফের সাবেক পদস্থ কর্তা ও অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ডঃ রেজা কিবরিয়াকে।আমার মত আরো অনেক ডঃ রেজাকে এখানে দেখে আশাবাদী হয়েছেন নিশ্চিত।প্রসংগত জনাব রেজা চাইলেই আজ বাংলাদেশের মন্ত্রি থাকার কথা ছিল।তার প্রয়াত পিতা ছিলেন এই দলের জাতীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী।সেই সাথে ছিলেন জনপ্রিয় সাংসদ।কিন্তু জনাব রেজা কিবরিয়া বিশ্বাস করেন না যে তার গুনী পিতাকে তৎকালিন সরকার হত্যা করেছে।তিনি বিশ্বাস করেন দলীয় কোন্দলেই তার পিতাকে জীবন দিতে হয়েছে।যেহেতু তার পিতা হত্যার অন্যতম বেনিফিশিয়ারি সরকার কাজে তারা সিলেটের বর্তমান মেয়র ও হবিগন্জের সাবেক মেয়র প্রমুখকে আসামি করে চার্জশীট দেয় যা কিবরিয়া পরিবার প্রত্যাখ্যান করেছে।রেজা দেশে এসে পরিবর্তনের আশায় ডঃ কামাল হোসেনের গনফোরামে যোগ দিয়ে সাধারন সম্পাদক হয়ে যান।সেই সাথে বিগত নির্বাচন তিনি ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদন্ধিতা করেন।গনফোরামের সম্পাদক হবার মাধ্যমেই মুলত রেজা কিবরিয়া জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন।তাছাড়া তার বিনয়ী স্বভাব ও ব্যাক্তিত্ব মাত্র এক দশকে তাকে সারাদেশে ভিন্ন ইমেজের মানুষ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।যে লোক ইচ্ছে করলেই মন্ত্রিত্বের পথ খোলা ছিল সে সেইপথে না যাওয়াটা ক্ষমতার প্রতি নির্লোভতার বার্তা দেয় পরিস্কার।
যাইহোক, জাতীয় রাজনীতির ব্যার্থপুরুষ ডঃ কামাল যখন তাকে হঠাৎ সাধারন সম্পাদক বানিয়ে ফেলেন এই নিয়ে সে দলে অস্বস্থি চলছিল।এক পর্যায়ে মিঃ রেজা স্বেচ্ছায় ডঃ কামালের দল ছেড়ে দিয়ে নিরব হয়ে যান।এদিকে নুরুরা তখন দল করবে বলে সিদ্বান্ত নিয়েছে।সেখানে আহবায়ক হিসেবে তারা একজন অভিজ্ঞ্য লোকের প্রয়োজন মনে করলে প্রয়াত ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌঃর পরামর্শে তারা ডঃ রেজার স্মরনাপন্ন হয়।ডাঃ জাফরুল্লাহর একান্ত অনুরোধে ডঃ রেজা তাদের আহবায়কের দায়িত্ব নিতে রাজী হন।শুরু হয় নতুন রাজনীতির পথযাত্রা।

৪-বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কাছে ধর্ম একটি আবেগের জায়গা।এটি এরশাদের মত নুরুরও বুঝতে দেরি হয়নি।নুরু হেফাজতের পক্ষে কথা বলতে শুরু করে।জামায়াত নেতাদের ফাসি নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করে।ভারত বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগাতে সে ভারত বিরোধী কঠিন বক্তব্য দেয়া শুরু করে।সময়ের ব্যাবধানে গনঅধিকার অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলা যায়।কিন্তু মিঃ রেজা যোগ দেয়ার পর থেকেই সেখানে নুরের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না বলে মাঝে মধ্যে সংবাদ মাধ্যমে দেখতাম।এতটাই অস্বস্তি ছিল যে নিজে দলীয় আহবায়ক হওয়া সত্বেও তাদের মিটিংয়ে না গিয়ে অন্য দলের মিটিংয়ে তাকে দেখা যেত।নুরুর সাথে এই টানাপোড়ান চলছিল শুরুর দিক থেকেই।কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সদস্য সচিব হিসেবে নুর নিজে অফিস ব্যাবহার করলেও তার আহবায়কের কোন অফিস সে রাখেনি।আমার কাছে মনে হয়েছে সে মিঃ রেজার ফরেইন কানেকশানগুলোকে এচিভ করার নিয়তেই তাকে এনেছিল এবং সে করেছেও।ইতিমধ্যে বিদেশী দুতালয়গুলোতে কিভাবে কি করতে হয় সে বিষয়ে সে বালেগ হয়ে গিয়েছে।এখন সে নিজেই সর্বেসর্বা।কোটা আন্দোলনের মামুন যেমন আজ থেকেও নেই তেমনি রেজারও দরকার নেই নুরের।

৫-ডঃ রেজার সাথে নুরের ঝামেলার পর তিনি নুরের আর্থিক অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।নুরের ওপর এই অভিযোগ নতুন নয়।মনে থাকার কথা, ইতিপুর্বে তার ঘনিষ্ট সহযোদ্বা বন্ধু রাশেদ মাস কয়েক আগে প্রবাসিদের কাছ থেকে নেয়া টাকার হিসেব চেয়ে প্রকাশ্যে গনমাধ্যমে কথা বলেছিল।এই অভিযোগ বেশ পুরনো এবং এর কোন জবাবও নুর প্রকাশ্যে দেয়নি কোথাও।এই নিয়ে কথা বলতে চাইনা এই কারনে যে, কোন পেশা ছাড়া দামি গাড়ি নিয়ে ঢাকায় চলাফেরা ও অভিজাত ফ্ল্যাট নিয়ে বসবাসের পেছনে কিছু ডাল মে কালা থাকতেই পারে।
স্পর্শকাতর যেটি ডঃ রেজা সামনে এনেছেন তা হচ্ছে জনৈক ভারতীয়চর শিবন কুমার ও ইসরাইলী নাগরিক সাফাদীর সাথে কাতারে তার বৈটক নিয়ে।এটিও নতুন অভিযোগ নয়।৬ মাস পু্র্বে এই অভিযোগ এসেছিল নুরের ছবি-ভয়েস রেকর্ডসহ।তখন তার দলের সবাই তার পক্ষ নিয়েছিল বলে সে অনায়াসে পার পেয়েছে।এবারও ডঃ রেজা অভিযোগটি নতুন করে সামনে আনলে নুর তাকে দলে থাকত দেয়নি।কিন্তু এবার ৬ মাস পুর্বে ঘটা সাক্ষাতের ব্যাপারে সবচেয়ে স্পর্শকাতর বক্তব্যটি এসেছে ঢাকায় নিযুক্ত প্যালেস্টাইনের দুতের সরাসরি মুখ থেকে।তিনি পরিস্কার করে বলেছেন তার কাছে গোয়েন্দা তথ্যমতে নুর মোট ৩ টি বৈটক করেছে ঐ লোকের সাথে।রাষ্ট্রদুতের এই বক্তব্যকেও নুর এবং তার অন্ধ ভক্তরা উড়িয়ে দিয়েছিল যদিও ইতিমধ্যে ভক্তদের বিশাল একটা অংশ তাকে ত্যাগ করেছে।দৈনিক প্রথম আলো আজ মেন্দি সাফাদির কাছ থেকে সরাসরি তার বরাতে বৈটকের বিষয়টি নিয়ে নিউজ করেছে।এরপরও কি কেউ সেই বৈটকের বিষয় অস্বীকার করবে! যে করবে সে অন্ধ ও বধীর বৈ কিছু নয় বলে বিশ্বাস করি।

লেখক

৬-তর্কের খাতিরে বলতে পারি মেন্দি আসলে কোন গুরুত্বপুর্ন কেউ নয়।কারন সে ইতিপু্র্বে বিএনপির আসলাম ও হাসিনাপুত্র জয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেছে বলে নিজে স্বীকার করেছে।কিন্তু যেই দেশের সাথে আমার দেশের সম্পর্ক নেই তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎটা কি নুরের ক্ষমতা লিপ্সার প্রমান নয়? সুযোগ পেলে নুর যে দেশ ও দশের জন্যে ক্ষতিকর হয়ে ওঠবেনা তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? নুর সঠিক পথে যদি থাকত এবং জনরায় নিয়ে সময়ের ব্যাবধানে কিছু একটা করতে বিশ্বাসি হত তাইলে হয়ত আজ সেও বিতর্কিত হতনা এবং সেই সাথে আমার মত অনেকের আশাকে দুরাশায় পর্যবশিত করত না।দেখার পালা পানি কোথায় গিয়ে গড়ায়।তবে বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগ অনেক বেশি। জনগনকে বিগড়িয়ে কতদুর যাওয়া যাবে তা দেখার বিষয়।

লেখক-ট্রেজারার, ইউকে বাংলা প্রেসক্লাব ও যুক্তরাজ্য প্রবাসি।
ইমেইল- mksuyed@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category