মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন

তারুণ্যের বিদেশ প্রেম

  • Update Time : বুধবার, ৭ জুন, ২০২৩
  • ১৬৩ Time View

জানিনা আমার লেখাটা লিখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা বিবেকশুদ্ব হচ্ছে।দেশপ্রেমের স্বপ্নে বিভোর আমি নিজে উত্তাল তারুণ্যে প্রবাসে এসেছিলাম তাই অন্যদের নিয়ে লেখাটা মানানসই কিনা বুঝতে পারছিনা।কিন্তু ইদানিং যে হারে তরুন-তরুনীরা দলবেধে দেশ কে ইতি জানিয়ে প্রবাসে আসছে তা দেখে সত্যি মন খারাপ হয়ে যায়।মাস্টার্স শেষ করা মানুষটি যেখানে চাকুরিতে যুক্ত হবার কথা অথবা উদ্যোক্তা হিসেবে শুধু নিজের নয় অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করার কথা তারা আজ দেশত্যাগ করে বিদেশে আসছে।আবার উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা কিশোরটিও আজ হিসেব শুরু করে দেয় কবে ফ্লাইট হবে।আগে উচ্চ মাধ্যমিকের পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আকাংখা থাকত ছাত্রদের আর এখন বেশিরভাগ পরিক্ষা শেষ করে সাথে সাথে আইইএলটিএসের পথে হাটা দেয়।প্রবাস গমনের এই হার আগে ছিল বৃহত্তর সিলেটে বেশি কিন্তু ইদানিং এই রোগে প্রায় সারাদেশ আক্রান্ত।

বিদেশে তথা বলা যায় সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশেই দেশান্তরী হচ্ছে আমাদের প্রজন্ম।শুধু টাকা রোজগারের জন্যে তারা যায়না, ঐসব দেশে গিয়ে আগে চিন্তা করে কিভাবে স্থায়ী হওয়া যায়।কল্পনা করা যায়, সাগরের উত্তাল গভীরে ছোট্র ডিংগি নৌকায় করে শতশত মানুষ লিবিয়া হয়ে ইউরোপে আসে এবং আসতেছে।ভিডিও আছে নৌকা ডুবে যাবার, বারবার আলোচনায় এসেছে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমে তারপরও মানুষের আগমন বন্ধ হয়নি।তুরস্ক হয়ে উচু পর্বতে মাইলের পর মাইল হেটে গ্রীস হয়ে অনেকে ঢুকছে এখনো।কত লোক বরফের ঠান্ডায় রাস্তায় মারা যায় হিসেব নেই।বছর দুয়েক আগে ডিডাব্লিউয়ের রিপোর্টে দেখলাম বসনিয়ার বর্ডার এলাকায় ক্রুয়েশিয়া হয়ে ঢুকার আশায় শতশত যুবক জংগলে বাস করছে মাসের পর মাস এমনকি কেউ বছর ধরে আছে ঐখানটায়।আইইএলটিএস দিয়ে, সার্টিফিকেট কিনে, কন্ট্রাক্ট বিয়ের মাধ্যমে মানুষ বিলেতে আসছে আজকাল হরদম।সাথে কেয়ার ভিসায় ২০/৩০ লাখ টাকা খরচ করে আসা মানুষজনের সংখ্যাও কম নয়।

দেশ এখন অনেক এগিয়েছে তা অস্বীকারের উপায় নেই।এগিয়েছে বলে মানুষ নিচে ১০ লাখ আর উপরে ২০/২৫ লাখ টাকা খরচ করে দেশ থেকে বেরুচ্ছে।প্রশ্ন হল তরুনরা দেশে একাডেমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে কিছু না করে বিদেশে কেন আসছে ঝাকে ঝাকে তার মুল কারন কি? দেশ এগিয়েছে।শিক্ষা, কর্মসংস্থান অথবা ব্যাবসা করার নানা পথ বেরিয়েছে।এখন টিনের চাল বা না খেয়ে উপোস করা লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম। প্রাইভেট সেক্টরে যেমন চাকুরি সুবিধা বৃদ্বি পেয়েছে তেমনি ব্যাংক-বীমা-শিক্ষা বা শিল্প প্রতিষ্টান হয়েছে বেশুমার।এত সম্ভাবনা থাকার পরও কেন তরুনরা বিদেশমুখো হচ্ছে? কেনই বা জীবনহানির নিশ্চিত সম্ভাবনা জেনেও তারা বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে আসতে চায়।এইসবের অন্তর্নিহিত কারন খুজে বের করে দেশের প্রজন্মকে দেশে রাখার চেষ্টা কর্তামহলের করা উচিত বলে মনে করি।

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে আমি এমন কিছু দেশের নাম শুনেছি যা আগে শুনিনি।মজার বিষয় সেইসব দেশেও বাংগালির বসবাস রয়েছে।বেইলিজ থেকে উগান্ডা পর্যন্ত বাংগালিরা বসবাস করছে।আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে ত্রিনিদাদ অথবা সুরিনামেও ঢেরা করে থাকা বাংগালির সংখ্যা কম নয়।সব দেশ যে আমাদের সোনার বাংলা থেকে উন্নত বা সুবিধার তা নয়।সামাজিক জীবনধারনও যে আমাদের চেয়ে নিরাপদ এমন নয়।কিন্তু এতকিছু জানার পরও প্রজন্ম বিদেশ বলতে পাগল প্রায়!

একটা সময় ছিল বিলেতে এসে উচু ডিগ্রী নিয়ে মানুষ দেশসেবার মানসে দেশে চলে যেত।নিকট অতীতে রাজনীতি-অর্থনীতি বা অন্যান্য পেশায় উচ্চ শিক্ষা অর্জন শেষে দেশে গিয়ে সাধারন মানুষের জন্যে নিরলস শ্রম দিয়ে যাওয়া মানুষের দেখা মিলত।কিন্তু এখনকার প্রজন্ম!! শুধু টাকা পয়সায় বা অবকাঠামোগত দিক দিয়ে উন্নত হলেই হবেনা।দেশে সামাজিক ন্যায় বিচার ও সম্মানজক কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা না দিতে পারলে সময়ে সময়ে এভাবে মেধাবি ও কর্মট প্রজন্মগুলো দেশের বাইরে চলে এলে তা জাতি হিসেবে আমাদের জন্যে দুর্ভাগ্যের হয়ে ওঠবে।দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং সাধারন মানুষ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হবে।
লেখকঃ মাহবুবুল কারীম সুয়েদ
ইউকে প্রবাসী সাংবাদিক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category