রোজা ও ঈদ নিয়ে আমাদের দেশে মতবিরুধ চলে আসছে।কিছু বিজ্ঞ্য উলামায়ে কেরাম সৌদি আরবের চাদ দেখাকে গ্রহনযোগ্য বুঝে সৌদি তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোজা-ঈদ ইত্যাদি পালন করেন।এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম ইখতেলাফ করলে মেনে নেয়া যায়।যেহেতু এটা হবে ইলমি মোজাকারা।তবে তা হবে যদি নিয়ত ভালো থাকে এবং কাউকে গায়েল বা পর্যদুস্ত করার নিয়ত না থাকে।ইসলামী শরিয়তের জ্ঞ্যান নেই শুধু যুক্তির বলে লেখালেখি করা অথবা আলিম হয়ে এমন কথা বলা যে, সৌদির সাথে আমরা আসর বা মাগরিবের নামাজ পড়িনা কেন! এমন বলাটাও মেনে নেয়া যায়না।এটা মুর্খতা সুলভ বিতর্ক ও একপ্রকার ব্যাঙ্গ করা বটে।
اختلاف مطالع বা উদয় স্থলের বিভিন্নতা নিয়ে ইমাম আবু হানিফা(র) ও সাহেবাইন তথা ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মোহাম্মদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।ইমাম আবু হানিফা(রঃ)র মতে اختلاف المطالع غير معتبر তথা উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রহনযোগ্য নয়।এবং সাহাবাইনদের মতে তাহা গন্যযোগ্য।আমাদের দেশে বেশিরভাগ এই মাসআলায় সাহেবাইনদের মতের ওপর আমল করা হচ্ছে।যারা সৌদি তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আমল করেন তারা ইমাম আবু হানিফার মতের ওপর আমল করছেন।উল্লেখ্য এবাদত ও মুয়ামেলাতের অনেক ক্ষেত্রে কোথাও ইমাম আবু হানিফার মত مفتي به কোথাও সাহেবাইনদের মত مفتي به কোথাও শায়খাইনদের মত مفتي به কোথাও তরফাইনদের (রঃ) মত مفتي به এ বিষয়টাও তদ্রুপ বিবেচ্য।
লক্ষনীয় যে, সৌদি আরব ও আমাদের দেশে সৌর সময় ৩ ঘন্টা ব্যাবধান।এই ৩ ঘন্টা ব্যাবধান গ্রহন করলে আমাদেরকে ২১ ঘন্টার ভিতরের কিছু আমল থেকে বঞ্চিত হতে হয়।যেমন আরাফার দিনে রোজা রাখা সুন্নত।আরফার মাঠ সৌদিতে অবস্থিত অন্য কোথাও নয়।ইমাম আবু হানিফা(র)র মত অনুযায়ী উদয়স্থলের বিভিন্নতা গ্রহন না করে সৌদির চাদ দেখাকে গ্রহন করে যদি ৯ই জিলহজ্ব রোজা রাখা হয় তাহলে আরফার দিনের রোজা হিসেবে গন্য হবে।আর আমাদের দেশের হিসাব অনুযায়ী রোজা রাখা হলে আরফার দিনের রোজা হিসেবে গন্য হবেনা।৩ ঘন্টা ব্যাবধান গ্রহন করার কারনে আরফার দিনের একটি সুন্নাত বাদ দেয়া হচ্ছে।অথচ এই ২১ ঘন্টার ভিতরেই আরফার দিনের অংশ বিশেষ বিদ্যমান আছে।
ফিক্বহের সব কিতাবে লিখা আছে তাকবিরে তাশরিক আরফার দিনের ফজর থেকে শুরু হবে।৯ ই জিলহজ্ব থেকে কোন কিতাবে লেখা নেই। কিন্তু আমাদের দেশে আরফার দিনের পরের দিন ফজর থেকে তাকবির পড়া শুরু হয়।আরফার দিনে একটি ওয়াক্তেও পড়া হয়নি।এটাও ফিকহী মাসআলার পরিপন্থী।ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ও তার ছাত্রদের দুরদর্শীতা সমান নয়।আজ বিজ্ঞ্যানের উন্নতির যুগে মুহুর্তের মধ্যে সৌদি আরবের চাদ দেখার খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।হয়ত এরুপ হবে বলে সে যুগে সকলের ধারনা ছিলনা।পশ্চিমা বিশ্বসহ প্রায় সকলেই এর ভিত্তিতে আমল করে আসছেন।ভারতীয় উপমহাদেশের কিয়দাংশ এর ব্যাতিক্রম।
বাকী ৩ ইমামদের قول راجح তথা প্রাধান্যপ্রাপ্ত কথা মতে উদয়স্থলের বিভিন্নতা গন্যযোগ্য নয়।অর্থ্যাৎ সৌদি আরবে চাদ দেখাটা সকলের জন্যে যথেষ্ট হিসেবে গন্য হবে।মহান আল্লাহ বিশ্ব মুসলিমকে ঐক্যবদ্ব হবার নির্দেশ দিয়েছেন।তাই মুসলমানদের জন্যে চন্দ্র নামক ক্যালেন্ডার দান করেছেন।যাতে এই ক্যালেন্ডার নির্ভর ইবাদত বন্দেগী, উৎসব-অর্চনা একসাথে করে ঐক্যের পরিচয় দিতে পারেন।
হজ্বের যাবতীয় কার্যাদী এক তারিখে, এক সময়ে ও একসাথে করতে হয়।এটা ঐক্যের নিদর্শনের স্বরুপ।
বিঃদ্রঃ- বহু বড় বড় মনিষীগন নিজের অভিমত থেকে পরবর্তীতে রুজু(প্রত্যাবর্তন) করেছেন।বাস্তব প্রমান ইমাম আবু হানিফা(র)।ইহাই তাক্বওয়া।আশা করি সকলে বুঝতে সক্ষম হবেন।আল্লাহ তৌফিক দান করুন।
লেখকঃ লন্ডন প্রবাসী।অবসরপ্রাপ্ত ভাইস প্রিন্সিপাল, বিশ্বনাথ কামিল এমএ মাদ্রাসা, সিলেট।