শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২০ পূর্বাহ্ন

শহীদুল হকের জব্দ হওয়া দুই বস্তায় ৪৮ আলামত

  • আপডেট : শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৭ Time View

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের শত কোটি টাকার সম্পদের দলিলসহ বিভিন্ন নথি খুঁজে পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তার এক আত্মীয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে নথিগুলো জব্দ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জব্দ হওয়া নথিপত্রে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। শহীদুল হক তার সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো আত্মীয়দের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন।

গত বছর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর শহীদুল হককে ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় বিভিন্ন থানার হত্যা মামলায়। গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে কয়েক দফায় রিমান্ডেও নেওয়া হয় পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শককে।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম এ অভিযান চালায়। জানা যায়, দুদক, এনবিআর ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে গুরুত্বপূর্ণ এসব নথি আত্মীয়ের বাসায় লুকিয়ে রাখেন শহীদুল।

বস্তায় যা পাওয়া গেছে

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, তল্লাশিকালে দুটি বস্তায় ৩৮ ধরনের ৪৮টি আলামত পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যবান সম্পত্তির দলিল, গোপনীয় চুক্তিপত্র, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, বন্ড, এফডিআর, সংঘ স্মারক, অফার লেটার, ব্যাংক হিসাব বিবরণীসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ নথি।

তিনি আরও বলেন, সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান। অনুসন্ধান কার্যক্রমের একপর্যায়ে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিট জানতে পারে, শহীদুল হক তার অবৈধ সম্পদের তথ্য সম্বলিত নথিপত্র আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়েছেন। সে আত্মীয় আবার আরেক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়েছেন।নথি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসবের মধ্যে রয়েছে শহীদুল হকের বাবা ও মায়ের নামে গড়া মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত ও এফডিআরের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত রয়েছে।সূত্র আরও জানায়, ওই দুই বস্তায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের দলিল ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কাগজ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার গুলশান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সাতটি পৃথক দলিল, সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ঢাকার পাঁচটি, উত্তরার দুটি, কেরানীগঞ্জের দুটি, মোহাম্মদপুরে দুটি, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও ফতুল্লার ১০টি দলিল রয়েছে। এছাড়া তার একটি ব্যক্তিগত ৭৯ পাতার ডায়েরি পাওয়া গেছে যাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য নোট করে রেখেছেন শহীদুল হক। এছাড়া বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে ২৯ নভেম্বর ও ১৮ নভেম্বর ইকবাল নামের একজনকে ১০ কোটি টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে। একই ব্যক্তিকে ২০১৯ সালে ১৯ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে ৫ কোটি ও ১৯ এপ্রিল চেকের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে আরও ১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত এক ব্যবসায়ীকে ৭টি চেকে ৩৫ কোটি টাকা, মজিদ-জরিনা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন চেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মজিদ জরিনা ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন সময়ে কোটি কোটি টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, নথিপত্রগুলো গোপন রাখার জন্য শহীদুল হক তার এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠান। এসব নথিপত্রে শহীদুল হকের বেআইনিভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য রয়েছে। দুদক এসব যাচাই বাছাই করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

এ কে এম শহীদুল হক ১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। শহীদুল হক পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জ জেলার দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিআইজি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রাজশাহী রেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জে ছিলেন।গত বছরই তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিভিন্ন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর