যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দল জোর প্রচার চালাচ্ছে। শেষ মুহূর্তের প্রচার বলে দিচ্ছে বিরোধী পক্ষের আশা এবং ক্ষমতাসীনদের শঙ্কা দুইই জোরদার। না হওয়ার কারণও নেই। কারণ এবারের এই মধ্যবর্তী নির্বাচন দেশটির অনেক হিসাব বদলে দিতে পারে, যার প্রভাব পড়বে বহির্বিশ্বেও।
ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের নেতারা এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। সুইং স্টেট নামে পরিচিত পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর ফল নিজেদের দিকে টানতে মাঠে নেমেছেন দুই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বারাক ওবামা। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কোনো বদল হবে না। তবে ক্ষমতার উৎসস্থল আইনসভার হিসাব বদলে যেতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের তথ্যমতে, এবারের মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ আসনের সবগুলোতেই ভোট হবে। ফলে নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণের হিসাব পুরোপুরি নির্ভর করবে এই নির্বাচনের ওপর। আর উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৫টিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৮ নভেম্বর। সিনেটে এমনিতেই ৫০টি করে আসনের দখল নিয়ে সমানে-সমান অবস্থানে আছে দুই দল। সঙ্গে থাকছে ৩৬টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচন।এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ, গর্ভপাত সম্পর্কিত আইন ইত্যাদি নিয়ে মার্কিন রাজনীতি অনেকটা টালমাটাল। জো বাইডেন প্রশাসন বেশ চাপে আছে বলতে হবে। এই চাপের সাথে যুক্ত হয়েছে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের প্রকাশ্য অবস্থান। আর অর্থনীতির জটিল-কঠিন সমীকরণ তো আছেই।
এবারের নির্বাচনের ফল বলে দেবে জো বাইডেন কার্যকর নাকি কাগুজে প্রেসিডেন্ট হবেন। আইনসভার উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে, বিশেষত সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে প্রশাসনে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমে যাবে। যে বিষয়গুলোতে বড় প্রভাব পড়তে পারে- গর্ভপাতের অধিকার, ট্রাম্পের পুনর্নিবাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা, ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে কংগ্রেস কমিটি দিয়ে তদন্ত পরিচালনা, ইরানের সাথে থাকা ছয়জাতি নিউক্লিয়ার চুক্তি, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরও সরাসরি অংশ নেওয়া, মধ্যপ্রাচ্যনীতি ইত্যাদি।এ সম্পর্কিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সব মিলিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল বলে দেবে যুক্তরাষ্ট্রে আঙ্গরাজ্যগুলোয় গর্ভপাতের অধিকার থাকবে কি থাকবে না। বিশেষত নারী অধিকার ইস্যুতে রিপাবলিকানদের যে কট্টর মনোভাব, তা এবারের নির্বাচনের পর ঠেকানো কঠিন হবে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে। রিপাবলিকানরা ১৫ সপ্তাহের গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। ডেমোক্র্যাট প্রশাসন এখন পর্যন্ত এটি আটকে রেখেছে। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে এটি আর আটকে রাখা যাবে না। কারণ এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ তারা অনেকটাই হারিয়েছে।
সার্বিকভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে আইনসভার দুই কক্ষে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অনেক কিছুই উল্টে দেবে। এবারের এই নির্বাচনকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি জনগণের আস্থার সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে কোনোভাবে পিছু হটলে আবারও ট্রাম্প জমানা শুরুর আশঙ্কা করছেন অনেকে।
অনেকেরই মনে থাকার কথা যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা গত নির্বাচনের সময়ই দিয়ে রেখেছেন। ফলে বাইডেন জন-আস্থায় পিছিয়ে গেলে ট্রাম্পের প্রতি আগ্রহী হবেন অনেকে। নির্বাচনী তহবিল জোগাড় করাও তখন অনেক সহজ হবে। সব মিলিয়ে আরেকটি ট্রাম্প-জমানা যুক্তরাষ্ট্রের দেখতে হবে কি-না, তার একটি ছোটখাটো হিসাব এই মধ্যবর্তী নির্বাচনই দিয়ে দেবে|