মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই ও যুবলীগ নেতা আশরাফুজ্জামান হিসামকে গ্রেফতার করেছে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ।
সোমবার গভীর রাতে চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা থানার ডিউটি অফিসার এসআই লিটন জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে অভিযান চালিয়ে হিসামকে আটক করা হয়েছে। আইনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে মাগুরায় পাঠানো হবে।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম-সেবা বলেন, হিসামের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানা ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাগুরায় হস্তান্তর করা হবে।
মাগুরা সদর থানার (ওসি) আয়ুব আলী বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে আইনগতভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তাকে মাগুরায় আনা হবে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা রয়েছে।হিসাম—মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসের ‘গডফাদার’স্থানীয় সূত্র জানায়, আশরাফুজ্জামান হিসাম দীর্ঘদিন ধরে মাগুরায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, কিশোর গ্যাং পরিচালনা, মাদক কারবার ও অবৈধ অস্ত্রধারী হিসেবে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাকে ‘গডফাদার’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে।
পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ শাসনের সময় হিসামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে চারজন সাংবাদিককে হামলার, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদগুলো কুক্ষিগত করা, হাট–বাজার, স্কুল কমিটি ও নানাবিধ প্রতাপ বিস্তার ও আধিপত্য বিস্তার করার অভিযোগ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক অস্ত্র রাখার অভিযোগও রয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় দেখা গেছে, গ্রেফতারের খবরে মাগুরার সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
শহরের ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, অনেক দিন ধরে হিসামের ভয়ে মানুষ আতঙ্কে ছিল। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এখন আমরা আশা করি ন্যায়ের বিচার হবে।
কলেজছাত্রী রিনা বলেন, আমাদের এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিত সে। স্কুল-কলেজের ছেলেদের ভুল পথে টেনে নিচ্ছিল। এবার আইন যদি কঠোর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসবে।
মাগুরার এক রাজনৈতিক নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, হিসামের মতো প্রভাবশালীরা রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে সন্ত্রাস ও মাদকের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। তার গ্রেফতার প্রমাণ করে, আইনের চোখে সবাই সমান।
মাগুরার বিএনপির রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই গ্রুপ সক্রিয় থাকলেও, গ্রেফতারের পর একটি গ্রুপ উল্লাস প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, এটি স্থানীয় রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরানোর একটি সংকেত।
এক দলীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলীয় পরিচয়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সে এতদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। এবার যদি আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়, তবে এটি মাগুরার জন্য একটি মাইলফলক। আমরা চাই বাকি গডফাদার ও সাইফুজ্জামান শিখরের খলিফারা আইনের আওতায় আনা হোক।
আশরাফুজ্জামান হিসামের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র হত্যার মামলা ছাড়াও মাগুরা ও ঢাকার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেফতারের ঘটনায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে এবং তারা আশা করছেন, বাকি সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।