ইউক্রেনের শিশুরা অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছে , ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য এটি হবে একটি ভয়াবহ বার্তা।
আমরা আফ্রিকাতে দেখছি, আফগানিস্থানে দেখেছি, পশ্চিমারা কিভাবে আফ্রিকা বা আফগানের কোমল মতি বাচ্চাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
যে পশ্চিমারা মানবতার বানী শুনিয়ে যাচ্ছে সেই পশ্চিমারাই সারাবিশ্বে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজা বা ই!সরাইল এর বড় উদাহরণ।
শৈশব হলো জীবনের সবচেয়ে নিষ্পাপ, কল্পনাময় আর আনন্দঘন সময়। এই সময়টায় বাচ্চাদের হাতে খেলনা, রংতুলির বাক্স, গল্পের বই কিংবা ফুটবল থাকা উচিত—অস্ত্র নয়।
অস্ত্র শিশুমনে ভয়ের বীজ বপন করে, সহিংসতার প্রতি আকৃষ্ট করে, আর তাদের মনোজগতে অপ্রয়োজনীয় ভার চাপিয়ে দেয়। বরং এই বয়সে তাদের শেখানো উচিত সহানুভূতি, বন্ধুত্ব, সৃজনশীলতা আর মানবিকতা।
বর্তমান বিশ্বের নানা অস্থিরতার মধ্যে যুদ্ধ একটি বড় বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি গোটা পৃথিবীকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন, পোল্যান্ড এবং রাশিয়ায় শিশুদের অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘটনা আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের শৈশব হওয়া উচিত নির্ভার, নির্মল ও স্বপ্নময়। যুদ্ধের ভয়াবহ বাস্তবতা শিশুমনে যে গভীর ক্ষত তৈরি করে, তা কোনো অস্ত্র দিয়েই মেরামত করা সম্ভব নয়। অথচ, ইউক্রেনে কিছু অঞ্চলে আজ যুদ্ধের প্রয়োজনে শিশুদের হাতেই তুলে দেওয়া হচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র।
এই ধরনের বাস্তবতা হয়তো পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে, তবে এটি একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কারণ, যুদ্ধ কেবল ভূখণ্ডের জন্য হয় না—এটি মানুষের মনোজগৎও ধ্বংস করে দেয়। অস্ত্র হাতে শিশুরা হয়তো সাময়িকভাবে সাহসী বোধ করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তারা হারিয়ে ফেলে মানবিকতা, হারিয়ে ফেলে স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা।
শিশুদের হাতে থাকা উচিত বই, খেলার সামগ্রী, আর্ট সেট কিংবা সঙ্গীত যন্ত্র— বন্দুক বা গ্রেনেড। রাষ্ট্র কিংবা সমাজ, যতই বিপদে থাকুক না কেন, শিশুদের যুদ্ধের শিকার বানিয়ে ফেলা একটি মানবিক অপরাধ।
শিশুদের অস্ত্র চালানো শিখিয়ে আমরা কাদের বিপক্ষে যুদ্ধ জিততে চাই?
যখন একটি জাতি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অস্ত্রের হাতেখড়ি দেয়, তখন সে জাতির ভবিষ্যৎই অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। একটি শিশুকে অস্ত্র চালানো শিক্ষা দেয়ার অর্থ দাঁড়ায়- এই শিশুটি একজন মানুষকে হত্যা করার জন্য নিজেকে তৈরি করছে যা খুবই ভয়াবহ মানসিক চাপ।
তাই আমাদের জোরালোভাবে বলতে হবে—শিশুদের হাতে অস্ত্র নয়, তাদের হাতে তুলে দিতে হবে ভালোবাসার শিক্ষা, শান্তির বার্তা, আর মানবতার আলো। যুদ্ধের মধ্যেও যেন শিশুদের শৈশব রঙিন থাকে, নিরাপদ থাকে—এই চেষ্টাটাই হোক আমাদের সবার লক্ষ্য।
কলামিষ্ট
শ্রাবণ রহমান।
হামবুর্গ, জার্মানি।