শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

ভারতে নতুন আইন কার্যকর:শিশু ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ড, বিয়ের আশ্বাসে যৌন সম্পর্কে ১০ বছরের সাজা

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪
  • ১ Time View

ব্রিটিশ আমলের আইন বাতিল করে ১ জুলাই থেকে ভারতে কার্যকর হয়েছে নতুন তিনটি অপরাধমূলক আইন। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই আইনগুলো বলবৎ করলো নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এসব আইনের কিছু ধারা নিয়ে বিরোধী দল এবং আইনজ্ঞদের তীব্র আপত্তি থাকলেও তাকে কর্ণপাত করেনি ক্ষমতাসীনরা। এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।

কী রয়েছে নতুন আইনে

এই আইনে নতুন অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে হত্যা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া, আক্রমণ, গুরুতর আঘাত করার মতো অপরাধগুলোর জন্য যে বিধান ছিল, তা বজায় রাখার পাশাপাশি সংগঠিত অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, গণহত্যার মতো অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন আইনে। ইউএপিএ’র মতো সন্ত্রাসবিরোধী আইনও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।১ জুলাই থেকে দেশটির ৬৫০টিরও বেশি জেলা আদালত ও ১৬ হাজার থানাকে এই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এখন থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারার পরিবর্তে বিএনএসএসের ১৭৩ ধারায় আমলযোগ্য অপরাধের মামলা করা হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় দেশদ্রোহের মতো অপরাধকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট তা স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছিল।

তবে এর পরিবর্তে নতুন আইনে ভারতের সার্বভৌমত্ব, একতা এবং অখণ্ডতাকে বিপন্ন করার মতো অভিযোগকে অন্যভাবে অপরাধের তালিকায় শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। সাজার কথাও বলা রয়েছে।

সন্ত্রাসবাদী কাজ, যা আগে আন-লফুল অ্যাকটিভিটিস (প্রিভেনশন) অ্যাক্টের মতো বিশেষ আইনের অংশ ছিল, তা এখন ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নতুন আইনে ১৮ বছরের কমবয়সী অর্থাৎ নাবালিকার ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ড থেকে আজীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত সাজার কথা বলা হয়েছে। গণধর্ষণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২০ বছর থেকে আজীবন কারাবাসের সাজা হতে পারে।যৌন সহিংসতার অভিযোগের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নারীর বয়ান তারই বাড়িতে নথিভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। নারী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সেই বয়ান দিতে পারবেন ভুক্তভোগী। বিয়ে বা অন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ১০ বছরের সাজার কথা বলা হয়েছে।

বাধ্যতামূলক সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তদন্ত এবং শুনানির জন্য। এখন শুনানির ৪৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে, অভিযোগের তিন দিনের মধ্যে এফআইআর দায়ের করতে হবে।

ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক সিস্টেমের (সিসিটিএনএস) মাধ্যমে এফআইআর নথিভুক্ত করা হবে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর অধীনে এই প্রোগ্রাম কাজ করে।

সিসিটিএনএস আপগ্রেড করা হয়েছে, যাতে থানায় না গিয়ে অনলাইনে ই-এফআইআর দায়ের করা যাবে। পরে থানায় গিয়ে সই করে আসতে হবে। অপরাধ যে থানার এখতিয়ারে পড়ুক, যে কোনো থানায় এফআইআর নথিভুক্ত করা যেতে পারে। দায় এড়াতে পারবে না কোনো থানা।অ্যাডাল্ট্রি এবং ৩৭৭ ধারা সরানো হয়েছে। তবে কর্ণাটক সরকার এতে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, ৩৭৭ সম্পূর্ণ অপসারণ ঠিক নয়। কারণ এটি অপ্রাকৃত যৌনতা সংক্রান্ত অপরাধের মামলায় ব্যবহার করা হয়।

চুরি, ডাকাতি, প্রতারণার মতো অপরাধের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধিতে যে বিধান ছিল, নতুন আইনেও তা রয়েছে। এর সঙ্গে সাইবার অপরাধ এবং আর্থিক প্রতারণার মতো অপরাধগুলোকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

এত দিন ভারতে গণপিটুনির জন্য কোনো আলাদা আইন ছিল না। এখন থেকে গণপিটুনির ক্ষেত্রে কড়া শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

নারীদের হার বা মোবাইল ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার বিচারের জন্যও রয়েছে আইনি ব্যবস্থা। মানবপাচার, পরিবেশ দূষণের মতো ঘটনায় কী শাস্তি হতে পারে তার উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়মের আওতায় তদন্তে এখন ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।বাজেয়াপ্ত, অনুসন্ধান এবং প্রমাণ সংগ্রহের সময় রেকর্ডিং অনলাইন মোডে করতে হবে।

এখন শুধু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরাই প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। আগে এনজিও বা সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোও আসামিদের পক্ষে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতো।

নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা অনুযায়ী, অভিযুক্তদের অধিকার সুরক্ষার জন্য পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করা হলে কোন অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা পুলিশকে জানাতে হবে। ধৃতের শারীরিক পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারকে চিকিৎসকের ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে নতুন আইন অনুযায়ী, ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ কোনো ব্যক্তিকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ। একই সঙ্গে, পুলিশকে কোনো অপরাধের তদন্তের স্বার্থে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির এবং আইনজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ, এতে ‘আইনের অপব্যবহার’ হতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category