বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন

গাজায় যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা নিয়ে জটিলতা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪
  • ৫ Time View

গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির পরিকল্পনায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনার প্রস্তার দিয়েছে হামাস। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন হামাসের উদ্দেশে বলেছেন, দরকষাকষি বন্ধের সময় এসেছে। কাতারের রাজধানী দোহায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কাজের সুযোগ নেই, তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশর এই চুক্তিটির জন্য চেষ্টা করে যাবে।

হামাস গত মঙ্গলবার বলেছে, তারা এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক তবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে।

তবে ইসরায়েল সরকার এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, হামাসের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের মতোই।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাবনা ১২ দিন আগেই দেওয়ার কথা বলেছেন তা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনো প্রকাশ্যে অনুমোদন করেননি। ব্লিঙ্কেন অবশ্য বলেছেন, সোমবার জেরুজালেমে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও ওই প্রস্তাবের সমর্থনে একটি প্রস্তাবনা পাস করেছে। উপসাগরীয় দেশটিতে কূটনৈতিক এই সফরের মাধ্যমে ব্লিঙ্কেন আঞ্চলিক সংকট সমাধানের চেষ্টা করছেন।

তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুর রহমান আল থানির সঙ্গে হাসিমুখেই সাক্ষাৎ করেছেন। দেশটি এ সংকটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার কার্যালয় আছে সেখানে। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনারও একটি চ্যানেল আছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেনকে কিছুটা উত্তেজিতও দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, গত ৬ মে হামাস যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল তার সাথে এবারের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। এর পেছনেই পুরো বিশ্ব আছে। ইসরায়েলও তা গ্রহণ করেছে। এখন হামাস একটিই প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং তা হলো ‘ইয়েস’।

তিনি আরও বলেন, এর পরিবর্তে হামাস দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করলো এবং তারপর অনেকগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করলো এবং এর কয়েকটি তারা আগেও গ্রহণ করেছে। এর ফলে হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা চলছে এবং আরও মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। ফিলিস্তিনিরা দুর্ভোগে পড়বে আরও ইসরায়েলিরাও দুর্ভোগে পড়বে।

বিঙ্কেন অবশ্য হামাসের পরিবর্তনের দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। হামাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ এবং ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল রিশক বলেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘দায়িত্বশীল, গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক’ এবং এটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ‘বড় পথ’ তৈরি করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, হামাস প্রধান তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলো পরিবর্তন করেছেন এবং জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন যেটা প্রেসিডেন্ট বাইডেন উপস্থাপন করেছিলেন।

বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া আরেক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সমঝোতায় পৌঁছাতে তারা পুরোপুরি ইতিবাচক। তারা ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার জন্য ব্লিঙ্কেনকে অনুরোধ করেছেন। এমন প্রেক্ষাপটেও তিনি বলেছেন যে, কাতার ও মিশরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে।

ব্লিঙ্কেন বলেন, আমি বিশ্বাস করি দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব। তবে হামাসকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় অভিযান চালাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আরও ২৫১ জনকে তারা জিম্মি করেছে।

পরে এক সমঝোতার আলোকে নভেম্বরে হামাস ১০৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিনিময়ে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং ২৪০ ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল। এখনো ১১৬ জন জিম্মি হয়ে আছেন, যার মধ্যে ৪১ জন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অপরদিকে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজার ২০২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৮৪ হাজার ৯৩২ জন।প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, নতুন প্রস্তাবে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে হামাস নারী, বয়স্ক মানুষ ও আহত জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির পাশাপাশি গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হবে এবং মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে।দ্বিতীয় ধাপে বেঁচে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হবে। যদিও এটি এখনো আলোচনার বিষয়। তৃতীয় ধাপে নিহত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং গাজার পুনর্গঠনে একটি বড় পরিকল্পনা নেওয়া হবে। হোয়াইট হাউজ উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও ইসরায়েলের নেতারা এ বিষয়ে সন্দিহান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category