ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স। শুধু তাই নয়, বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়নও শুরু করেছে দেশটি। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই রাস্তায় নামছে মানুষ।আল-আকসা মসজিদে বাররবার হামলা ও নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার জবাবে গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
বৃষ্টির মতো বোমা ফেলে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর থেকে শুরু করে দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সপ্তম দিনের মতো বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় গত সাত দিনে ১ হাজার ৭৯৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৬ হাজার ৩৩৮ জন।
বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত ও নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর ওপর ইসরাইলি বাহিনীর নির্মম নিধনযজ্ঞে বিশ্বের দেশে দেশে মানুষ প্রার্থনা করছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ জানাচ্ছে, ফিলিস্তিনের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে, ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়াচ্ছে। স্লোগান দিতে ও পতাকা ওড়াতে দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিনের পক্ষে।
কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের টুটি চেপে ধরছে ইউরোপের দেশগুলো। চলতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনের পক্ষে সমাবেশ, স্লোগান ও ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানো বেআইনি ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য। এবার একই ধরনের পদক্ষেপ দেখা গেল ফ্রান্সেও।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ফিলিস্তিনের পক্ষে সব ধরনের প্রতিবাদ–বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফ্রান্স। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নিয়ম ভঙ্গকারী বিদেশী নাগরিকদের পদ্ধতিগতভাবে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।’
বিবিসির প্রতিবেদন মতে, ইহুদি বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবারাই প্যারিসের রাস্তায় নামে হাজার হাজার মানুষ। তারা ফিলিস্তিনিদের পক্ষে স্লোগান দেয় এবং ইসরাইলের বিমান হামলার নিন্দা জানায়।
খবরে বলা হয়, এদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ প্যারিসের প্রেস দে লা রিপাবলিকে জড়ো হয়। তারা রাজপথ অবরোধ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্যারিস ছাড়া লিলি, বোর্দো ও অন্যান্য শহরে সমাবেশ হয়।
ইসয়াইলি দখলদারদেরকে খুনি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে দুষ্কর্মের সহযোগী বলে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এমনকি তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে।
এখানেই শেষ নয়, বিক্ষোভ থেকে অন্তত ১০জনকে আটক করে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন, ‘যারা এমন সমাবেশ করেছে তাদের গ্রেফতার করা উচিত। কারণ তারা জনশৃঙ্খলা ব্যাহত করছে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমাবেশ নিষিদ্ধ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেই দমন করছে ইউরোদের দেশগুলো।
যারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে, তাদের দেশেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যেভাবে দমন করা হচ্ছে, এরপর কি তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকার রাখে কিনা এমন প্রশ্নও তুলছেন বিশ্লেষকরা।