শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন

ক্রমবর্ধমান সংকটে ভেঙে খানখান হবে কি পাকিস্তান?

  • আপডেট : শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২২৬ Time View

ভারত, আফগানিস্তান, ইরান ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ থাকা দেশ পাকিস্তান চারটি প্রদেশ পাঞ্জাব, সিন্ধু, খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান নিয়ে গঠিত। আরও একটি ফেডারেল অঞ্চল ও দুটি ‘অধিকৃত’ অঞ্চল রয়েছে দেশটির। ফেডারেল অঞ্চল রাজধানী ইসলামাবাদ এবং ‘অধিকৃত’ অঞ্চলের একটি কাশ্মীর ও অপরটি গিলগিট বালতিস্তান।

ভারতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দাবি করা হয়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও গিলকিট বালতিস্তান উভয়ই এক সময় জম্মু ও কাশ্মীরের অধীনে ছিল, যা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষের অংশ ছিল এবং অবৈধভাবে সেটি দখল করেছে পাকিস্তান। যদিও পাকিস্তান এ দাবিকে অস্বীকার করে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে একই দাবি করে।


ইউসুফ নাজার নামে একজন গবেষকের ‘বলকানাইজেশন অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইকোনোমি অব পাকিস্তান’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই এর এক প্রতিবেদেনে বলা হয়, এসব প্রদেশ ও অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতি রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তান সেগুলোকে সংগঠিত বা ঐক্যবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানের জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ পাঞ্জাবিরা। সরকার, সেনাবাহিনী এবং বিচার বিভাগের সব প্রধান পদে তারা। পাঞ্জাবিরা ভাগ্যবান যে দেশের বাকি অংশে অনেক সংকট ও সমস্যা থাকলেও সেগুলো তারা এড়াতে পারেন। তবে অব্যাহত বিভিন্ন সংকট, সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতাবাদীতা দেশটিতে সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছে।

দেশের জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে পাকিস্তানিরা।

পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ নাভিদ বাসির বলেন, পাকিস্তান সরকার কিংবা সেনাবাহিনী যা করছে, বিচার বিভাগ যা করছে, তাতে জনগণ খুশি নয়। তারা আসলেই পুরোপুরি খুশি নয় এবং এমন আন্দোলনের পথ খুঁজছে যা তাদের নেতৃত্ব দিতে পারে।

বেলুচরা তাদের নিজেদের ভূমিতে সংখ্যালঘুর মতো বসবাস করছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হাতে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান ঋণ এবং বৈদেশিক মুদ্রা হ্রাসের কারণে পাকিস্তানের আর্থিক সংকটের সঙ্গে বেলুচদের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন তীব্র হয়েছে এবং পাকিস্তান ও তার মিত্র চীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে।

এরইমধ্যে দেশটিতে স্বাধীনতাপন্থী কিছু সংগঠন জেয় সিন্ধু কওমি মাহাজ (জেএসকিউএম), ওয়ার্ল্ড সিন্ধ কংগ্রেস, এবং জেয় সিন্ধ ফ্রিডম মুভমেন্টের মতো বেশ কিছু সংগঠন ব্যাপক সমর্থন অর্জন করেছে।

সিন্ধুরা প্রাচীন সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার সঙ্গে তাদের শেকড় খুঁজে পেতে পারে। তারা মনে করছে, পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত থাকার ফলে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত ও হুমকির মুখে পড়বে। এভাবে একটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্য আওয়াজ উঠছে।

বৈষম্য, দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও চরম দারিদ্র্য এবং সংস্কৃতি ও ভাষাগত আগ্রাসনের মুখে পাকিস্তানের এসব অংশের মানুষ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ক্রমবর্ধমান টানাপোড়েন দেশটিকে ‘বলকানাইজেশন’ বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিদ্বেষপূর্ণ গোষ্ঠী-অংশে পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে যেতে পারে কিনা- এখন সেই প্রশ্ন উঠছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর