শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন

আ.লীগের সম্মেলন: সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা

  • Update Time : বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ২৮ Time View

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আসছে ২৪ ডিসেম্বর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে কাউন্সিলের উত্তাপ দলটির রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকেই দেখতে চান আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী।

সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে— কে হচ্ছেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক।  কেউ বলছেন, একই পদে হ্যাটট্রিক করবেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আবার অনেকেই বলছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন সময়ের ব্যাপার। সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে এটি নিশ্চিত।একইসঙ্গে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও আসতে পারে বড় পরিবর্তন। দলটির একাধিক সূত্র বিষয়টি আমার সংবাদকে নিশ্চিত করেছে।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। প্রতিবারের মতো এবারও নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে ২২তম সম্মেলন।

দলের এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকন্যার বিকল্প তৈরি হয়নি বলে মনে করেন তারা। ফলে আগ্রহ শুধু সাধারণ সম্পাদক পদ ঘিরে। ওবায়দুল কাদের টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাচ্ছেন, না কি নতুন কাউকে দায়িত্ব হচ্ছে— তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে চুলচেরা বিশ্লষণ। মূলত দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিকভাবে ব্যাপক অসুস্থ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় অধিকাংশ জেলা-উপজেলা সম্মেলনে অংশ নেননি।

গত কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন। সশরীরের কোথাও সাংগঠনিক সফরে করতে পারেনি। এরফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাকে আর দলের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানা গেছে। মূলত শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পদ থেকে বাদ পড়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানা তৃতীয়বার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর পর ওই পদে কাউকে তৃতীয়বার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। অধিকাংশ সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনা ও দলের টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার রেওয়াজ না থাকায় এ পদ থেকে বাদ পরতে পারেন ওবায়দুল কাদের।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা
ওবায়দুল কাদেরের বিদায়ের গুঞ্জন থাকায় আলোচনায় উঠে এসেছে এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতার নাম। যারা যারা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দাপটের সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। মিছিল-মিটিং, আন্দোলন-সংগ্রাম, সভা-সমাবেশ ও বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে মাঠের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে বেশি এগিয়ে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি দলের দুঃসময়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন সফলতার সাথে। এরফলে নানকের সারাদেশে ব্যাপক কর্মী-সমর্থক এবং জনপ্রিয়তা রয়েছে। সে কারণে এবার সম্মেলনে তার সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে দৌড়ে এগিয়ে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান। পঁচাত্তর পরবর্তী সময় থেকে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় পর্যন্ত মাঠের আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এছাড়াও আলোচনায় আছেন-আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। রাজনীতির মাঠে ক্লিন ইমেজ ধরে রাখার সুবাদে তিনিও আসতে পারেন এ পদে। একটি বিশেষ দেশের অনুকম্পাও তার সাপোর্টে রয়েছে বলে জানা গেছে। সাধারণ সম্পাদক পদে আরও যারা আলোচনায় আছেন— যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

প্রকাশ্যে না হলেও এরা প্রত্যেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক হতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান জানান দিতে দলীয় কর্মসূচি ও পার্টি অফিসে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন জেলা-উপজেলা আ.লীগের সম্মেলনে। আওয়ামী লীগের যতবার জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে ততবারই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওবায়দুল কাদেরকে পরিবর্তন করা হলে ওই পদে সাবেক ছাত্রলীগের কোনো নেতাকে নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে।

গণভবন সূত্র মতে, দলের ২২তম সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল, দলের নীতি-আদর্শের কাছে আপসহীন, দুর্দিন ও দুঃসময়ের পরীক্ষিত, চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ঐক্যবদ্ধ। কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে ওই সব নেতাকে মূল্যায়ন করবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে পদপ্রত্যাশীদের সৎ, দক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত, দলের জন্য নিবেদিত, পরিশ্রমী, মেধাবী, পরীক্ষিত ও দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন নেতাদের মধ্যে থেকেই সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে দু’জনকে প্রেসিডিয়াম বা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দেখা যেতে পারে। এরা হলেন-আহমদ হোসেন ও বিএম মোজাম্মেল হক।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়েই আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে যে সব কার্যক্রম রয়েছে ইতোমধ্যে সে সব কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু আমার সংবাদকে বলেন, ‘রেওয়াজ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে নবিন-প্রবীণের সমন্বয়ে নেতৃত্ব তুলে আনা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দলের নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরির প্রধান উপায় হচ্ছে কাউন্সিল। একমাত্র কাউন্সিলের মধ্যে দিয়ে যোগ্য ও সঠিক নেতৃত্ব তুলে আনা সম্ভব।

এআই

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category