শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

মেসির পেনাল্টি মিসের পরও দারুণ জয়ে শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনা

  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৬১ Time View

পেনাল্টি মিসের পর লিওনেল মেসির অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল সব। চোয়াল নেমে গিয়েছিল, স্তব্ধ আর্জেন্টাইন গ্যালারিও। মহানায়ক কি এবার খলনায়ক হতে যাচ্ছেন তবে! ঘোষণা দিয়েই যে পেনাল্টি ঠেকালেন ভয়চেক সেজনি। সেই দুঃস্বপ্ন নিয়েই বিরতিতে যান মেসি। সেই বিরতিতেই হয়তো সতীর্থদের বিশেষ কোনো বার্তা দিয়েছিলেন মেসি।

কে জানে, হয়তো বলেছিলেন দিনটা আজ তাঁর জন্য রাঙিয়ে দিতে। তাই হয়তো মাঠে ফিরতেই অন্য রূপ! পোলিশ দেওয়াল গুঁড়িয়ে দিতে আর্জেন্টিনা সময় নিল এক মিনিটেরও কম। মেসির দায় শোধের প্রথম ভারটা নিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। গোলটা আসতেই যেন প্রাণ ফিরে পেল আর্জেন্টাইন গ্যালারি, প্রাণ ফিরে পেল দর্শকদের হাতে থাকা ডিয়েগো ম্যারাডোনার পোস্টারও। আর এগিয়ে গিয়ে আর্জেন্টিনা যেন আরও ধারালো।

এরপর আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেওয়ার ভারটা নিলেন আলভারেস। সেই আলভারেস যিনি শৈশব থেকে মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলবেন বলে স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিলে তিলে বোনা সেই স্বপ্নকে রাঙানোর সুযোগটা হারাবেন কেন! ৬৮ মিনিটেই তাঁর এক চোখ ধাঁধানো গোলে ব্যবধান ২-০ করে আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের আগে লিওনেল মেসির পেনাল্টি ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন পোলিশ গোলরক্ষক সেজনি। সেই কথা রেখেছেন এই গোলরক্ষক। ৩৯ মিনিটে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠিকই মেসির শট ঠেকালেন এই গোলরক্ষক। শুধু মেসির পেনাল্টিই নয়, প্রথমার্ধে একের পর আর্জেন্টাইন প্রচেষ্টা একাই ঠেকিয়েছেন পোলিশ গোলরক্ষক। তবে আর কতক্ষণ! দ্বিতীয়ার্ধে পেরে ওঠেননি। তবে হেরেও গ্রুপ শীর্ষ হওয়া আর্জেন্টিনার সঙ্গী হয়েছে পোল্যান্ড। তাই অন্য ম্যাচে সৌদি আরবকে ২–১ গোলে হারিয়েও লাভ হয়নি মেক্সিকোর।

ম্যাচের শুরুতেই সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার সামনে। যদিও কাছাকাছি গিয়ে অল্পের জন্য গোলের দেখা পায়নি তারা। তবে পরের মুহূর্তে আক্রমণ গিয়ে আর্জেন্টিনার ডিফেন্স কাঁপায় পোল্যান্ড। ক্রিস্তিয়ান বিয়েলিকের শট বাধাগ্রস্ত হয় আর্জেন্টাইন ডিফেন্সে।

মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছোট ছোট পাসে আক্রমণ তৈরির চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। ৭ম মিনিটে আগের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে করা গোলের মতোই ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন মেসি। তবে আগে পোলিশ গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি সতর্ক থাকায় বিপদে পড়তে হয়নি পোল্যান্ডকে।

ম্যাচের প্রথম ১৫ মিনিট পোলিশ রক্ষণের আশপাশে থেকেই হুমকি তৈরির চেষ্টা করছিল আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডরা। তবে আলবিসেলেস্তাদের আক্রমণ পোলিশ রক্ষণ ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ১৭ মিনিটে মার্কোস আকুনিয়ার শট যায় বারের ওপর দিয়ে।

২১ মিনিটে ফ্রি কিক পেয়েছিল পোল্যান্ড। তবে তা আর্জেন্টিনাকে বিপদে ফেলার মতো ছিল না। তবে এমন দুই একটা আচমকা সুযোগ তৈরি ছাড়া ম্যাচে প্রথমার্ধের বেশির ভাগ সময়েই বল ছিল আর্জেন্টিনার দখলে। আর্জেন্টিনার আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে পোল্যান্ডকে বেশ নিচে নেমে এসেই রক্ষণ সামলাতে হচ্ছিল।

তবে নিজেদের দুর্গ সামলানোর কাজটা বেশ ভালোভাবেই করছিল তারা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে আলভারেসকে ঠেকিয়ে দেন সেজনি। একই আক্রমণে পরের মুহূর্তে আকুনিয়ার জোরালো শট যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৩৩ মিনিটে আনহেল দি মারিয়ার কর্নার থেকে নেওয়া শট সেজনি দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে না দিলে সেটি প্রায় পোস্টের ভেতর ঢুকেই গিয়েছিল।

একটু পর দারুণ এক থ্রু বল নিয়ে পোলিশ রক্ষণে ঢুকে পড়েছিলেন আলভারেস। তবে এবারও পোল্যান্ডের ত্রাতা হয়ে গোল ঠেকিয়ে দেন সেজনি। সেই আক্রমণে সেজনির ফাউলের শিকার হন মেসি। ভিএআর দেখে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। তবে পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ হন মেসি নিজেই। পেনাল্টি মিস যেন আরও তাতিয়ে দেয় আর্জেন্টিনাকে। বিরতির আগ পর্যন্ত একের পর এক আক্রমণে পোলিশ রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় তারা। তবে সেজনি-প্রাচীর ভেদ করে জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ।

বিরতির পর অবশ্য আর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। প্রথম মিনিটে সেজনি থিতু হওয়ার আগেই নাহুয়েল মলিনার পাস থেকে বল পেয়ে লক্ষ্যভেদ করেন ম্যাক অ্যালিস্টার। একটু পরই অবশ্য গোল শোধ করে দিতে পারত পোল্যান্ড। তবে ফ্রি কিক থেকে পাওয়া বলে গ্লিকের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দারুণ এক আক্রমণে মেসি একাই বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন আর্জেন্টাইন রক্ষণে। শেষ পর্যন্ত বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি।

এগিয়ে থেকেও আর্জেন্টিনা রীতিমতো আক্রমণের ঝড় তুলেছিল। ব্যবধান ২-০ করার পর সুযোগ এসেছিল সেই ম্যাক অ্যালিস্টারের সামনে। যদিও এবার আর ফাঁকি দিতে পারেননি সেজনিকে। তবে ৬৮ মিনিটে ঠিকই ধসে পড়ে পোলিশ দেওয়াল। দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান আলভারেজ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর