২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন পাথর কোয়ারির শ্রমিকেরা। তবে এমন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের ১১ গ্রামের মানুষ। ওই গ্রামগুলোতে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত চার শতাধিক পরিবার আগাম সবজি চাষ করে ভাগ্যও ফেরাতে শুরু করেছেন।
পাথরশ্রমিক থেকে সবজিচাষি হওয়া পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগাম সবজি চাষ করে তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন। গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের জমির পাশাপাশি অন্যের কাছ থেকে খেত ভাড়া নিয়ে সবজি ফলাচ্ছেন। প্রতি বিঘা ৩০ হাজার টাকা দরে এক বছরের জন্য জমি ভাড়া নিয়ে আয় করছেন দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। তাঁরা জানান, রুপচেং ও মাঝেরবিল গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় চার বছর আগে শিম চাষের মধ্য দিয়ে এলাকায় প্রথম সবজি চাষ শুরু করেন। যদিও আগে থেকে শিম চাষ হতো, কিন্তু সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে হতো না। তবে এখন সেটিই প্রধান উপার্জনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়ছে চাষের জমির পরিমাণ।গত ২৮ অক্টোবর জৈন্তাপুরের নিজপাট ইউনিয়নের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের হর্নি, বাইরাখেল, রুপচেং, নয়াগ্রাম, মাঝেরবিল, কালিঞ্জি, দিগারাইল, লক্ষ্মীপ্রসাদ, লক্ষ্মীপ্রসাদ হাওর, পাখিবিল ও কামরাঙ্গী গ্রামগুলোতে এখন চারদিকে শুধু সবজির খেত। গ্রামের সড়কের দুই পাশে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার শুধু বরবটি, ঝিঙে, করলা, লাউ, শিমের খেতে সবুজের সমারোহ। ওপরে ভারতের বিভিন্ন পাহাড়। আর নিচে সবজির সবুজের সমারোহ।রুপচেং গ্রামের বাসিন্দা হেলাল আহমদ বলেন, আগে গ্রামের মানুষজন পাথর কোয়ারির প্রতি নির্ভরশীল ছিলেন। তিনি নিজেও কোয়ারিতে কাজ করেছেন। তবে কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হওয়ার পর পরিবার নিয়ে সংকটে পড়েছিলেন। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। আগে যেখানে শুধু পরিবারের জন্য কিছু সবজির চাষ করতেন, সেখানে এখন বিক্রির জন্য সবজি চাষ করছেন। এবার তিনি প্রায় দেড় বিঘা জমিতে বরবটি এবং আরও দেড় বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে, দামও ভালো পাচ্ছেন। বরবটি এখন বাজারে বিক্রি হলেও শিম আগামী মাস থেকে বিক্রি শুরু করতে পারবেন বলে জানান তিনি।হেলাল আহমদ বলেন, সবজি চাষে লাভবান হওয়া যায়, এমনটি আগে ধারণা ছিল না। এ ছাড়া সবজি চাষ পরিশ্রমের কাজ হিসেবে মনে করতেন অনেকে। তবে এখন কোয়ারি বন্ধ থাকায় এ কাজেই ঝুঁকছেন সবাই। এতে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি ধারণাও পাল্টাচ্ছে।